চন্দ্রশেখর

প্রতাপ ও শৈবালির একসময় মনে হয় তাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে না। তারা দুইজন নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করতে গেলেও শৈবালিনী ফিরে আসে; কিন্তু প্রতাপ ঝাপ দেয় ও ডুবে যায়। চন্দ্রশেখর নামক এক নৌচারির হস্তক্ষেপে প্রতাপ উদ্ধার হয়। চন্দ্রশেখরের সাথে শৈবালিনীর বিয়ে হয়। কিন্তু শৈবালিনী চন্দ্রশেখরকে ভালবাসতে পারেনি। চন্দ্রশেখর সারাদিন বই পড়া ও পাণ্ডিত্য চর্চায় ব্যস্ত থাকে। এই সুযোগে শৈবালিনী তার প্রতি অনুরক্ত ইংরেজ লরেন্স ফক্টরের সহায়তায় গৃহ ত্যাগ করে।

তৎকালীন বাংলার মহান অধিপতি মীর কাসিম এর সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ আসন্ন। কিন্তু বেগম দালানী নবাব মীর কাসিমকে যুদ্ধে না জড়ানোর অনুরোধ করে। কিন্তু মীর কাসিম অতিমাত্রায় তার সেনাপতি গুরগণ খাঁ এর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করেন। গুরগণ খাঁ বেগমের ভাই হলেও রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করছিল। তার ষড়যন্ত্রে বাঁধা হয়ে দাড়ানোয় সে বেগম দালানী ও দাসী কুলসুমকে কৌশলে দরবার থেকে বের করে দেয়। স্বামী রমানন্দের সহায়তায় প্রতাপের বাড়িতে তাদের আশ্রয় হয়।

গৃহত্যাগী শৈবালিনীকে খুঁজতে চন্দ্রশেখর দেশান্তরি হয়। এদিকে প্রতাপ তার স্ত্রী রূপসীর বোন সুন্দরীর কাছ থেকে সব ঘটনা শোনে এবং সেও শৈবালিনীকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। প্রতাপ লরেন্সের নৌবহরে হামলা করে এবং শৈবালিনীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ইংরেজদের বহরে হামলা করায় প্রতাপের বাড়িতে ইংরেজ বাহিনী আক্রমণ করে। তারা শৈবালিনী ভেবে প্রতাপের বাড়িতে আশ্রিত দালনী বেগম ও দাসী কুলসুমসহ প্রতাপ ও রামচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। শৈবালিনী এ ঘটনা নবাব মীর কাসিমকে জানায়। বিস্তারিত শুনে নবাব মুর্শিদাবাদের সেনাপতিকে ইংরেজদের আটকের নির্দেশ দেন। শৈবালিনী প্রতাপকে বাঁচাতে নিজে ছদ্মবেশে ইংরেজদের নৌকায় যায় এবং পালানোর জন্য দুজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। প্রতাপ ও শৈবালিনী পালানোর সময় নদীতে একসাথে সাঁতার কাটতে গিয়ে তাদের পুরনো কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু শৈবালিনী যেন তার স্বামীকে ভালবাসতে পারে সেজন্য প্রতাপ তাকে ভুলে যাওয়ার অনুরোধ করে। এরপর শৈবালিনী সন্ন্যাসী রূপ ধারণ করে এবং পাপমুক্তির হবার জন্য জঙ্গলে-পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়। একজন অদৃশ্য সাধু পুরুষের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শৈবালিনী সন্ন্যাসব্রত হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। একসময় দেখা যায় সেই অদৃশ্য সাধুপুরুষ আসলে চন্দ্রশেখর। সে শৈবালিনীকে নিয়ে নিজ গৃহে ফিরে আসে। কিছুদিন পর শৈবালিনী জ্ঞান ফিরে আসে এবং সব বিস্তারিত বলে। চন্দ্রশেখর সব ভুলে গিয়ে তাকে আপন করে নেয়।

এদিকে ইংরেজরা বেগমের পরিচয় পায় এবং আসন্ন আক্রমণের ভয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। ইতোমধ্যে মোহাম্মদ তকি নবাবের কাছে বেগমের নামে বেশ্যাবৃত্তি ও ইংরেজদের উপপত্নী হওয়ার মিথ্যা সংবাদ দেয়। নবাব কষ্ট পেয়ে বেগমকে হত্যার আদেশ দেন। নবাবের হুকুম অনুযায়ী মোহাম্মদ তকি বেগমকে বিষ পান করানোর জন্য গেলেও তার মন পরিবর্তন হয়। সে নিজের ভুল স্বীকার করে বলে সে নিজেই নবাবের কাছে বলবে যে বেগম ইংরেজদের উপপত্মী নন। বেগম ব্যথিত হয় এবং তীব্র ঘৃণা থেকে একজন দাসীর সহায়তায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে। বেগম আত্মহত্যার পূর্বে ত্বকীকে বলেন তোর মত কুলাঙ্গারের উচিত আমার সাথে বিষপানে আত্মহত্যা করা। দাসী কুলসুম নবাবের কাছে গিয়ে বিস্তারিত বললে নবাব আফসোস করেন এবং ব্যথিত হন।

ইংরেজদের সাথে তখন নবাবের যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে সেনাপতি গুররণ খাঁর বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার নবাব প্রায় হারাতে বসেছেন। নবাব লরেন্সকে শাস্তি দিতে সাক্ষী হিসেবে শৈবালিনীকে দরবারে ডাকেন। শৈবালিনী ও চন্দ্রশেখর যখন দরবারে উপস্থিত ঠিক তখনই ইংরেজ বাহিনী আক্রমণ করে। প্রতাপ এর সহায়তায় চন্দ্রশেখর, শৈবালিনী ও স্বামী রামানন্দ পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। শৈবালিনী প্রতাপকে এ জীবনে কোনদিন তার সামনে না আসার অনুরোধ করে। কারণ তার আসাটা হবে শৈবালিনীর সুখ ভঙ্গের জন্য দায়ী। পরিশেষে সবার নিষেধ অমান্য করে প্রতাপ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে একপ্রকার আত্মহত্যা করে।

[vukti] : পরিচ্ছেদসমূহ

[catlist taxonomy=”book” terms=”candrashekhar” orderby=date order=asc numberposts=-1 excludeposts=this template=threecolumn]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *