January 11, 2016January 11, 2016 0 Comments
একাদশ পরিচ্ছেদ – অগ্নিকাণ্ডে তৃষিতা চাতকী
বেগমদিগকে বিদায় দিয়া চঞ্চলকুমারী আবার অন্ধকার দেখিল। মোগল ত পরাভূত হইল, বাদশাহের বেগম তাহার পরিচর্যা করিল, কিন্তু কৈ, রাণা ত কিছু বলেন না। চঞ্চলকুমারী কাঁদিতেছে দেখিয়া নির্মল আসিয়া কাছে বসিল। মনের কথা বুঝিল। নির্মল বলিল, “মহারাণাকে কেন কথাটা স্মরণ করিয়া দাও না?”
চঞ্চল বলিল, “তুমি কি ক্ষেপিয়াছ? স্ত্রীলোক হইয়া বার বার এই কথা কি বলা যায়?”
নি । তবে রূপনগরে, তোমার পিতাকে কেন আসিতে লেখ না?
চ। কেন? সেই পত্রের উত্তরের পর আবার পত্র লিখিব?
নি । বাপের উপর রাগ অভিমান কি?
চ। রাগ অভিমান নয়। কিন্তু একবার লিখিয়া–সে আমারি লেখা–যে অভিসম্পাত প্রাপ্ত হইয়াছি, তাহা মনে হইলে এখনও বুক কাঁপে, আর কি লিখিতে সাহস হয়?
নি । সে ত বিবাহের জন্য লিখিয়াছিলে?
চ। এবার কিসের জন্য লিখিব?
নি । যদি মহারাণা কোন কথা না পাড়িলেন–তবে বোধ করি, পিত্রালয়ে গিয়া বাস করাই ভাল–ঔরঙ্গজেব এ দিকে আর ঘেঁষিবে না। সেই জন্য পত্র লিখিতে বলিয়াছিলাম। পিত্রালয়ে ভিন্ন আর উপায় কি?
চঞ্চল কি উত্তর করিতে যাইতেছিল। উত্তর মুখ দিয়া বাহির হইল না–চঞ্চল কাঁদিয়া ফেলিল। নির্মল ও কথাটা বলিয়াই অপ্রতিভ হইয়াছিল।
চঞ্চল, চক্ষুর জল মুছিয়া, লজ্জায় একটু হাসিল। নির্মল ও একটু হাসিল। তখন নির্মল হাসিয়া বলিল, “আমি দিল্লীর বাদশাহের কাছে কখন অপ্রতিভ হই নাই–তোমার কাছে অপ্রতিভ হইলাম–ইহা দিল্লীর বাদশাহের পক্ষে বড় লজ্জার কথা। ইমলি বেগমেরও কিছু লজ্জার কথা। তা, তুমি একবার ইমলি বেগমের মুনশীআনা দেখ। দোয়াত-কলম লইয়া লিখিতে আরম্ভ কর–আমি বলিয়া যাইতেছি |”
চঞ্চল জিজ্ঞাসা করিল, “কাহাকে লিখিব–মাকে, না বাপকে?”
নির্মল বলিল, “বাপকে |”
চঞ্চল পাঠ লিখিলে, নির্মল বলিয়া যাইতে লাগিল, “এখন মোগল বাদশাহ মহারাণার হস্তে___” “বাদশাহ” পর্যন্ত লিখিয়া চঞ্চলকুমারী বলিল, “মহারাণার হস্তে” লিখিব না–“রাজপুতের হস্তে” লিখিব। নির্মলকুমারী ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “তা লেখ |” তার পর নির্মলের কথন মতে চঞ্চল লিখিতে লাগিল–
“হস্তে পরাভব প্রাপ্ত হইয়া রাজপুতানা হইতে তাড়িত হইয়াছেন। এক্ষণে আর তাঁহার আমাদিগের উপর বলপ্রকাশ করিবার সম্ভাবনা নাই। এক্ষণে আপনার সন্তানের প্রতি আপনার কি আজ্ঞা? আমি আপনারই অধীন__”
পরে নির্মল বলিল, “মহারাণার অধীন নই |”
চঞ্চল বলিল, “দূর হ পাপিষ্ঠা |” সে কথা লিখিল না। নির্মল বলিল, “তবে লেখ, ‘আর কাহারও অধীন নই’ |” অগত্যা চঞ্চল তাহাই লিখিল।
এইরূপ পত্র লিখিত হইলে, নির্মল বলিল, “এখন রূপনগর পাঠাইয়া দাও |” পত্র রূপনগরে প্রেরিত হইল। উত্তরে রূপনগরের রাও লিখিলেন, “আমি দুই হাজার ফৌজ লইয় উদয়পুর যাইতেছি। ঘাট খুলিয়া রাখিতে রাণাকে বলিবে |”
এই আশ্চর্য উত্তরের অর্থ কি, তাহা চঞ্চল ও নির্মল কিছুই স্থির করিতে পারিল না। পরিশেষে তাহারা বিচারে স্থির করিল যে, যখন ফৌজের কথা আছে, তখন রাণাকে, অবগত করা আবশ্যক। নির্মলকুমারী মানিকলালের নিকট সংবাদ পাঠাইয়া দিল।
রাণাও সেইরূপ গোলযোগে পড়িয়াছিলেন। চঞ্চলকুমারীকে ভুলেন নাই। তিনি বিক্রম সোলঙ্কিকে পত্র লিখিয়াছিলেন। পত্রের মর্ম, চঞ্চলকুমারীর বিবাহের কথা। বিক্রম সিংহ কন্যাকে শাপ দিয়াছিলেন, রাণা তাহা স্মরণ করাইয়া দিলেন। আর তিনি যে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন যে, তিনি কখন রাজসিংহকে উপযুক্ত পত্র বিবেচনা করিবেন, তখন তাঁহাকে আশীর্বাদের সহিত কন্যা সম্প্রদান করিবেন, তাহাও স্মরণ করাইলেন। রাণা জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আপনার কিরূপ অভিপ্রায়?”
এই উত্তরে বিক্রম সিংহ লিখিলেন, “আমি দুই হাজার অশ্বারোহী লইয়া আপনার নিকট যাইতেছি। ঘাট ছাড়িয়া দিবেন |”
রাজসিংহ, চঞ্চলকুমারীর মত সমস্যা বুঝিতে পারিলেন না। ভাবিলেন, “দুই হাজার মাত্র অশ্বারোহী লইয়া বিক্রম আমার কি করিবে? আমি সতর্ক আছি |” অতএব তিনি বিক্রমকে ঘাট ছাড়িয়া দিবার আদেশ প্রচার করিলেন।
চঞ্চল বলিল, “তুমি কি ক্ষেপিয়াছ? স্ত্রীলোক হইয়া বার বার এই কথা কি বলা যায়?”
নি । তবে রূপনগরে, তোমার পিতাকে কেন আসিতে লেখ না?
চ। কেন? সেই পত্রের উত্তরের পর আবার পত্র লিখিব?
নি । বাপের উপর রাগ অভিমান কি?
চ। রাগ অভিমান নয়। কিন্তু একবার লিখিয়া–সে আমারি লেখা–যে অভিসম্পাত প্রাপ্ত হইয়াছি, তাহা মনে হইলে এখনও বুক কাঁপে, আর কি লিখিতে সাহস হয়?
নি । সে ত বিবাহের জন্য লিখিয়াছিলে?
চ। এবার কিসের জন্য লিখিব?
নি । যদি মহারাণা কোন কথা না পাড়িলেন–তবে বোধ করি, পিত্রালয়ে গিয়া বাস করাই ভাল–ঔরঙ্গজেব এ দিকে আর ঘেঁষিবে না। সেই জন্য পত্র লিখিতে বলিয়াছিলাম। পিত্রালয়ে ভিন্ন আর উপায় কি?
চঞ্চল কি উত্তর করিতে যাইতেছিল। উত্তর মুখ দিয়া বাহির হইল না–চঞ্চল কাঁদিয়া ফেলিল। নির্মল ও কথাটা বলিয়াই অপ্রতিভ হইয়াছিল।
চঞ্চল, চক্ষুর জল মুছিয়া, লজ্জায় একটু হাসিল। নির্মল ও একটু হাসিল। তখন নির্মল হাসিয়া বলিল, “আমি দিল্লীর বাদশাহের কাছে কখন অপ্রতিভ হই নাই–তোমার কাছে অপ্রতিভ হইলাম–ইহা দিল্লীর বাদশাহের পক্ষে বড় লজ্জার কথা। ইমলি বেগমেরও কিছু লজ্জার কথা। তা, তুমি একবার ইমলি বেগমের মুনশীআনা দেখ। দোয়াত-কলম লইয়া লিখিতে আরম্ভ কর–আমি বলিয়া যাইতেছি |”
চঞ্চল জিজ্ঞাসা করিল, “কাহাকে লিখিব–মাকে, না বাপকে?”
নির্মল বলিল, “বাপকে |”
চঞ্চল পাঠ লিখিলে, নির্মল বলিয়া যাইতে লাগিল, “এখন মোগল বাদশাহ মহারাণার হস্তে___” “বাদশাহ” পর্যন্ত লিখিয়া চঞ্চলকুমারী বলিল, “মহারাণার হস্তে” লিখিব না–“রাজপুতের হস্তে” লিখিব। নির্মলকুমারী ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “তা লেখ |” তার পর নির্মলের কথন মতে চঞ্চল লিখিতে লাগিল–
“হস্তে পরাভব প্রাপ্ত হইয়া রাজপুতানা হইতে তাড়িত হইয়াছেন। এক্ষণে আর তাঁহার আমাদিগের উপর বলপ্রকাশ করিবার সম্ভাবনা নাই। এক্ষণে আপনার সন্তানের প্রতি আপনার কি আজ্ঞা? আমি আপনারই অধীন__”
পরে নির্মল বলিল, “মহারাণার অধীন নই |”
চঞ্চল বলিল, “দূর হ পাপিষ্ঠা |” সে কথা লিখিল না। নির্মল বলিল, “তবে লেখ, ‘আর কাহারও অধীন নই’ |” অগত্যা চঞ্চল তাহাই লিখিল।
এইরূপ পত্র লিখিত হইলে, নির্মল বলিল, “এখন রূপনগর পাঠাইয়া দাও |” পত্র রূপনগরে প্রেরিত হইল। উত্তরে রূপনগরের রাও লিখিলেন, “আমি দুই হাজার ফৌজ লইয় উদয়পুর যাইতেছি। ঘাট খুলিয়া রাখিতে রাণাকে বলিবে |”
এই আশ্চর্য উত্তরের অর্থ কি, তাহা চঞ্চল ও নির্মল কিছুই স্থির করিতে পারিল না। পরিশেষে তাহারা বিচারে স্থির করিল যে, যখন ফৌজের কথা আছে, তখন রাণাকে, অবগত করা আবশ্যক। নির্মলকুমারী মানিকলালের নিকট সংবাদ পাঠাইয়া দিল।
রাণাও সেইরূপ গোলযোগে পড়িয়াছিলেন। চঞ্চলকুমারীকে ভুলেন নাই। তিনি বিক্রম সোলঙ্কিকে পত্র লিখিয়াছিলেন। পত্রের মর্ম, চঞ্চলকুমারীর বিবাহের কথা। বিক্রম সিংহ কন্যাকে শাপ দিয়াছিলেন, রাণা তাহা স্মরণ করাইয়া দিলেন। আর তিনি যে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন যে, তিনি কখন রাজসিংহকে উপযুক্ত পত্র বিবেচনা করিবেন, তখন তাঁহাকে আশীর্বাদের সহিত কন্যা সম্প্রদান করিবেন, তাহাও স্মরণ করাইলেন। রাণা জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আপনার কিরূপ অভিপ্রায়?”
এই উত্তরে বিক্রম সিংহ লিখিলেন, “আমি দুই হাজার অশ্বারোহী লইয়া আপনার নিকট যাইতেছি। ঘাট ছাড়িয়া দিবেন |”
রাজসিংহ, চঞ্চলকুমারীর মত সমস্যা বুঝিতে পারিলেন না। ভাবিলেন, “দুই হাজার মাত্র অশ্বারোহী লইয়া বিক্রম আমার কি করিবে? আমি সতর্ক আছি |” অতএব তিনি বিক্রমকে ঘাট ছাড়িয়া দিবার আদেশ প্রচার করিলেন।