January 14, 2016January 14, 2016 0 Comments
দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ
পাঠককে বলিতে হইবে না যে, দুর্গমধ্যেই সিপাহীরা বাস করিত। ইহাও বলা গিয়াছে যে, সিপাহী সকলই দুর্গ ছাড়িয়া পলাইয়াছে, কেবল জন পঞ্চাশ নিতান্ত প্রভুভক্ত ব্রাহ্মণ ও রাজপুত পলায় নাই। তাহারা বাছা বাছা লোক-বাছা বাছা লোক নহিলে এমন সময়ে বিনা বেতনে কেবল প্রাণ দিবার জন্য পড়িয়া থাকে না। এখন তাহারা বড় অপ্রসন্ন হইয়া উঠিল। এ দিকে মুসলমান সেনা আসিয়া পড়িয়াছে, মহা কোলাহল করিতেছে, কামানের ডাকে মেদিনী কাঁপাইতেছে-গোলার আঘাতে দুর্গপ্রাচীর ফাটাইতেছে—তবু ইহাদিগকে সাজিতে হুকুম দিলেন না! তাহারা কেবল প্রাণ দিবার জন্য পড়িয়া আছে, অন্য পুরস্কার কামনা করে না, কিন্তু তাও ত ঘটিয়া উঠে না-কেহ ত বলে না, “আইস! আমার জন্য মর!” তখন তাহারা বড় অপ্রসন্ন হইয়া উঠিল।
তখন তাহারা সকলে মিলিয়া এক বৈঠক করিল। রঘুবীর মিশ্র তাহার মধ্যে প্রাচীন এবং উচ্চপদস্থ-রঘুবীর তাহাদিগকে বুঝাইতে লাগিল। বলিল, “ভাই সব! ঘরের ভিতর মুসলমান আসিয়া খোঁচাইয়া মারিবে, সেই কি ভাল হইবে? আইস, মরিতে হয় ত মরদের মত মরি! চল, সাজিয়া গিয়া লড়াই করি। কেহ হুকুম দেয় নাই-নাই দিক! মরিবার আবার হুকুম হাকাম কি? মহারাজের নিমক খাইয়াছি, মহারাজের জন্য লড়াই করিব—তা হুকুম না পাইলে কি সময়ে তাঁর জন্য হাতিয়ার ধরিব না? চল, হুকুম হোক না হোক, আমরা গিয়া লড়াই করি!”
এ কথায় সকলেই সম্মত হইল। তবে গয়াদীন পাঁড়ে প্রশ্ন তুলিল যে, “লড়াই করিব কি প্রকার? এখন দুর্গরক্ষার উপায় একমাত্র কামান। কিন্তু গোলন্দাজ ফৌজ ত সব পলাইয়াছে। আমরা ত কামানের কাজ তেমন জানি না। আমাদের কি রকম লড়াই করা উচিত?”
তখন এ বিষয়ের বিচার আরম্ভ হইল। তাহাদের দুর্মদ সিংহ জমাদ্দার বলিল, “অত বিচারে কাজ কি? হাতিয়ার আছে, ঘোড়া আছে, রাজাও গড়ে আছে। চল, আমরা হাতিয়ার বাঁধিয়া, ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া রাজার কাছে গিয়া হুকুম লই। মহারাজ যাহা বলিবেন, তাহাই করা
যাইবে |”
এই প্রস্তাব অতি উত্তম বলিয়া স্বীকার করিয়া সকলেই অনুমোদন করিল। অতি ত্বরা করিয়া সকলে রণসজ্জা করিল—আপন আপন অশ্ব সকল সুসজ্জিত করিল। তখন সকলে সজ্জীভূত ও অশ্বারূঢ় হইয়া আস্ফালনপূর্বক, অস্ত্রে অস্ত্রে ঝঞ্ঝনা শব্দ উঠাইয়া উচ্চৈস্বরে ডাকিল, “জয় মহারাজকি জয়! জয় রাজা সীতারামকি জয়!”
সেই জয়ধ্বনি সীতারামের কানে প্রবেশ করিয়াছিল।
তখন তাহারা সকলে মিলিয়া এক বৈঠক করিল। রঘুবীর মিশ্র তাহার মধ্যে প্রাচীন এবং উচ্চপদস্থ-রঘুবীর তাহাদিগকে বুঝাইতে লাগিল। বলিল, “ভাই সব! ঘরের ভিতর মুসলমান আসিয়া খোঁচাইয়া মারিবে, সেই কি ভাল হইবে? আইস, মরিতে হয় ত মরদের মত মরি! চল, সাজিয়া গিয়া লড়াই করি। কেহ হুকুম দেয় নাই-নাই দিক! মরিবার আবার হুকুম হাকাম কি? মহারাজের নিমক খাইয়াছি, মহারাজের জন্য লড়াই করিব—তা হুকুম না পাইলে কি সময়ে তাঁর জন্য হাতিয়ার ধরিব না? চল, হুকুম হোক না হোক, আমরা গিয়া লড়াই করি!”
এ কথায় সকলেই সম্মত হইল। তবে গয়াদীন পাঁড়ে প্রশ্ন তুলিল যে, “লড়াই করিব কি প্রকার? এখন দুর্গরক্ষার উপায় একমাত্র কামান। কিন্তু গোলন্দাজ ফৌজ ত সব পলাইয়াছে। আমরা ত কামানের কাজ তেমন জানি না। আমাদের কি রকম লড়াই করা উচিত?”
তখন এ বিষয়ের বিচার আরম্ভ হইল। তাহাদের দুর্মদ সিংহ জমাদ্দার বলিল, “অত বিচারে কাজ কি? হাতিয়ার আছে, ঘোড়া আছে, রাজাও গড়ে আছে। চল, আমরা হাতিয়ার বাঁধিয়া, ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া রাজার কাছে গিয়া হুকুম লই। মহারাজ যাহা বলিবেন, তাহাই করা
যাইবে |”
এই প্রস্তাব অতি উত্তম বলিয়া স্বীকার করিয়া সকলেই অনুমোদন করিল। অতি ত্বরা করিয়া সকলে রণসজ্জা করিল—আপন আপন অশ্ব সকল সুসজ্জিত করিল। তখন সকলে সজ্জীভূত ও অশ্বারূঢ় হইয়া আস্ফালনপূর্বক, অস্ত্রে অস্ত্রে ঝঞ্ঝনা শব্দ উঠাইয়া উচ্চৈস্বরে ডাকিল, “জয় মহারাজকি জয়! জয় রাজা সীতারামকি জয়!”
সেই জয়ধ্বনি সীতারামের কানে প্রবেশ করিয়াছিল।